বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজার দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা সরকারের ১৪ একর খাস ভূমি যে তার দখলে ছিল সেটা সত্য বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার। সেই ভূমি থেকে স্থাপনা সরানোর কাজ ধীরগতিতে এগুচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে বানিয়াচং উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান এক ভিডিও বার্তায় জানান,গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে,একই দাগে ১৩ একর জায়গা সেই সাথে আরো তিনটা বিভিন্ন দাগে টোটাল ১৮ একর সরকারের খাস খতিয়ানের জায়গা আছে। সেই জায়গায় দেখলাম একটা মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। কিছু জায়গা আছে যেটা আমরা ভূমিহীনদের লীজ দিয়েছে। তবে সেখানে গিয়ে ভূমিহীনদের পাইনি। যেহেতু পাই নাই এবং দেখলাম যে মাদ্রাসা গুলো গড়ে উঠেছে খাস খতিয়ান জায়গায়। পরে ওইখানের পরিচালকের সাথে কথা বলার পরে উনি বলছেন যে ভূমিহীনরা নাকি তাকে হস্তান্তর করেছে। ভূমিহীনরা তো সেটা হস্তান্তর করতে পারেনা। আর হস্তান্তর করার কোনো নিয়ম ও নেই। সেই হিসেবে আমরা ভূমিহীনদের যে নথিগুলো আছে সেটা খোঁজে বের করে তারপর আমরা দেখবো আদৌ কোনো ভূমিহীন আছে কিনা।
তবে মাদ্রাসার পরিচালক জানিয়েছেন সেখানে নাকি ভূমিহীন আছে। তারা এই গ্রামেই থাকে। নথিতে যদি না থাকে তাহলে আমরা পরবর্তীতে এই মাদ্রাসার পরিচালকের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাবো। সরকারি খাস ভূমি দখল প্রসঙ্গে গত ২৫ নভেম্বর মক্রমপুর ইউনিয়নের কচুয়ারআব্দা গ্রামের এলাকাবাসীর পক্ষে জ্যোতিময় দাস নামে এক ব্যক্তি মাননীয় ভূমি মন্ত্রীর বরাবরে জেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও মক্রমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রেজার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে রেকর্ডপত্রাদি আলোকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে গত ৩ ডিসেম্বর ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ (হবিগঞ্জ) ইয়াছিন আরাফাত রানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবারে পত্রাদি প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান গত বৃহস্পতিবার উপরোক্ত ভূমিতে উপস্থিত হয়ে দখল করে রাখা ভূমিতে বিভিন্ন স্থাপনা বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করে সীমান চিহ্নিত করে দেন।
জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুলতানপুর মৌজার এস,এ,জে,এল নং-২০০, আর,এস,জে,এল নং-২০৫, খতিয়ান নং-১ এর দাগ নং ৯১,৯৩ ও ১৩৩ এর মোট ১৪ একর ৪৫ শতক ভূমি বিগত ১৯৮৮ সনে এলাকার ভূমিহীনদের নামে লীজ প্রদান করে উপজেলা ভূমি অফিস। কিন্তু লীজ দেয়ার পর উপরোক্ত ভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করে পতিত ই ফেলে রাখে ভূমিহীনরা। পরে ২০১০ সালে এলাকাবাসী ও ভূমিহীনদের মধ্যে এই ভূমি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে শফিক মেম্বার নামে এক এলাকাবাসী নিহত হয়। ঘটনায় আসামি করা হয় উক্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রেজাকে ও। হত্যার ঘটনার বিষয়টি পরবর্তীতে সমাধান হলে এলাকার নিরীহ ভূমিহীনদের নানা প্রলোভন,ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে পুরো ভূমিসহ কাগজপত্র নিয়ে নেন হুমায়ুন কবীর রেজা।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার ওই ভূমিতে গিয়ে দেখা যায়, হুমায়ুন কবীর রেজার ছোট ভাই মরহুম সামায়ুন কবীরের নামে “সামায়ুন কবীর হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এই মাদ্রাসার পিছনে এতিমখানার জন্য আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেন হুমায়ুন কবীর রেজা। মাদ্রাসার দক্ষিণ দিকে পুকুরের মধ্যে মাছচাষ ও পুকুরের পাড়ে রোপন করা নানা জাতের গাছ বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিজের পকেটস্থ করছেন। আজ পর্যন্ত সরকারের কোষাগারে একটি টাকাও জমা দেননি হুমায়ুন কবীর রেজা। আংশিক জায়গায় মাদ্রাসা এতিমখানা নির্মাণ করে পুরো ১৪ একর জায়গাই তিনি দখল করে রেখেছেন তিনি।
এটা নিয়ে গত শুক্রবার (৩জানুয়ারি) বেশ কয়েকটি স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায়“জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজার কবল থেকে ১৪একর সরকারি ভূমি উদ্ধার”শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর পুরো জেলা জুড়ে রসালো আলোচনার সৃষ্টি হতে থাকে। হুমায়ুন কবীর রেজা নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। তুমূল ঝঁড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও। সংবাদ প্রকাশের পরের দিন (শনিবার) জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদের প্রতিবাদ জানান।
এই প্রতিবাদের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারকে অবগত করলে তিনি জানান,ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে তার নামে জায়গা দখলের অভিযোগ আসছে। সকল তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। আর সে যে দখলে আছে সেটা কনফার্মই। সে এখন ভয়ে স্বীকার করছেনা। সবাই জানে সে সরকারের খাস ভূমি দখল করে আছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সরকারি কোনো ভূমিতে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেনা। সরকার যদি চায় সেটা ভিন্নকথা। প্রকৃত লীজধারীরা যদি ভূমিতে কোনো কিছু না করতে আগ্রহ হয় তাহলে তার লীজ বাতিল করে দেয়া হবে। আর লীজ হস্তান্তর করার কোনো নিয়ম নেই।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান জানান,এই খাস ভূমি উদ্ধার হলে সেখানে আশ্রয়ন প্রকল্প বা গুচ্ছ গ্রামের জন্য উপর মহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।